June 6, 2008

বন নেই তো প্রাণও নেই

মানুষের সর্বনাশা ছোবলে বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে প্রকৃতি, ধ্বংস হয়েছে সবুজ বন আর প্রকৃতির সন্তান বন্য প্রাণীর বসতি। এ ধ্বংসলীলায় আমরাও পিছিয়ে নেই। ফলে এ দেশের প্রকৃতি থেকে একে একে হারিয়ে গেছে গন্ডার, ময়ুরসহ অসংখ্য বন্য প্রাণী। কেউ আবার অস্তিত্ব রক্ষার শেষ সংগ্রামে রত।

বিলুপ্ত বন্য প্রাণী
ময়ুর: ভারতীয় ময়ুরই আমাদের কাছে ময়ুর। অদ্ভুত সুন্দর এ পাখিটির একটি নমুনাও আর এ দেশের প্রকৃতিতে বেঁচে নেই। অথচ ৭০-৮০ বছর আগেও ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর এলাকায় মহানন্দে ঘুরে বেড়াত এরা। বাংলাদেশে সব শেষ ভারতীয় ময়ুর দেখা গেছে আশির দশকের গোড়ার দিকে, ঢাকার শ্রীপুরের শালবনে। চট্টগ্রাম আর পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যে ছিল বর্মি ময়ুরের বাস। সম্ভবত এরাও বিলুপ্ত হয়েছে।
বনগরু: পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম আর সিলেটের অরণ্যগুলোতে একসময় ছিল এদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। কিন্তু মানুষের সর্বনাশা লোভ আর শিকারিদের উৎপাতে আরও অনেক বণ্য প্রাণীর সঙ্গে এরা হারিয়ে গেছে। এখনো মাঝেমধ্যে গারো পাহাড়ের ভারতীয় অংশ থেকে দু-চারটি গৌর পথ ভুলে চলে আসে।
গন্ডার: একসময় বাংলাদেশের জঙ্গলগুলোতেও পরম শান্তিতে ঘুরে বেড়াত গন্ডার। পাঁচ প্রজাতির গন্ডারের মধ্যে তিন প্রজাতির বাস এশিয়ায়, আর এ তিন প্রজাতিই ছিল বাংলাদেশে। একশৃঙ্গ গন্ডার পাওয়া যেত সুন্দরবন, গারো পাহাড়ের পাদদেশ, ময়মনসিংহ ও সিলেটের টিলাঘেঁষা জলাভুমিতে। কুমিল্লার পাহাড়ি এলাকা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত বনভুমিতে বিচরণ করত দুইশৃঙ্গ গন্ডার। আর জাভাদেশীয় গন্ডারের বিচরণ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সাগু-মাতামুহুরী রিজার্ভে।
বারশিঙা: বিশালদেহী এ হরিণের শিঙে ১২-১৪, এমনকি কখনো কখনো ২০টি পর্যন্ত শাখা-প্রশাখা থাকে। একসময় রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, সুন্দরবনসহ দেশের অনেক এলাকায় এদের দেখা যেত। বাংলাদেশে বারশিঙাদের শেষ বিচরণভুমি ছিল সুন্দরবন। ’৫৪-র বন্যার সময়ই সম্ভবত এখান থেকে হারিয়ে যায়।
রাজশকুন: অনেক দিন থেকেই আর এদের চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ থেকে যে এরা বিলুপ্ত হয়েছে, এটি এখন প্রায় নিশ্চিত। ’৭০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এদের অবস্থানের তথ্য পাওয়া গেছে।

বিপন্ন বন্য প্রাণী
সাম্বার: বাংলাদেশে যে কয় জাতের হরিণ পাওয়া যায় তার মধ্যে আকৃতিতে সবচেয়ে বড় সাম্বার। এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও সিলেটের জঙ্গল এবং ময়মনসিংহ আর বৃহত্তর সিলেটের হাওড় এদের প্রচুর দেখা গেলেও শিকারিদের নির্বিচারে হত্যার কারণে অনেক জায়গা থেকেই বিলুপ্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইসহ আরও কিছু বন এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটের দু-একটি বনেও সম্ভবত অল্পসংখ্যায় হলেও টিকে আছে সাম্বার।
রামকুত্তা: রামকুত্তারা দলবদ্ধভাবে শিকার করে। চিত্রাহরিণ, সাম্বারের মতো শিকারের ওপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবিত অবস্থায়ই খুবলে মাংস খেতে শুরু করে। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, পাবলাখালী অভয়ারণ্যসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গল ও সিলেটের সীমান্তঘেঁষা অরণ্যগুলোতেও এদের দেখা পাওয়া যায়।
চিতাবাঘ: ঢাকার পাশের মধুপুরেই একসময় দুর্দান্ত প্রতাপে রাজত্ব করে বেড়াত চিতাবাঘ। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে বন ধ্বংস আর মানুষের হিংস্রতার ফলে মধুপুরে এখন আর একটি চিতাবাঘও নেই। রেমা, কালেঙ্গা লাঠিটিলা, রাগনাসহ সিলেট বিভাগের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বিভিন্ন বনে সাম্প্রতিক সময়েও চিতাবাঘ দেখেছেন কেউ কেউ। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম বনগুলোতে এখনো সম্ভবত অল্প সংখ্যায় এরা আছে।
মেঘলা চিতা: বিড়াল গোত্রের এ প্রাণীটির লেজসহ গড় দৈর্ঘ্য ১৯৫ সেমি। ওজন ১৫-২৩ কেজি। নিশাচর আর বৃক্ষচর স্বভাবের কারণে মেঘলা চিতাদের দেখা পাওয়া খুব কঠিন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশসহ কিছু দুর্গম অরণ্যে এখনো এরা আছে।
সোনালি বিড়াল: সোনালি বিড়াল একসময় বাংলাদেশের চিরসবুজ বনগুলোয় অল্পবিস্তর দেখা গেলেও এখন এদের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর জঙ্গলে আর সিলেটের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বনগুলোতে এখনো এদের থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

2 comments:

Night-Writer said...

বন গরু ব গয়াল বা গাউর নিয়ে দেয়া তথ্যটা ঠিক না। বান্দারবানে প্রচুর গয়াল টিকে আছে। আমি প্রচুর বুনো এবং পোশা গয়াল পেয়েছি। থানছি, রুমা, নাইখং ছড়িতে গয়ালের দুধ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। রুমার মুংলাই পাড়া, থানছির বলিপাড়াতে গয়ালের খামার দেখেছি। রোয়াংছড়ির পাইখিয়াং পাড়াতে গয়াল আর গরুর শঙ্কর টং গরু দেখছি।

Aero River said...

বা! সত্যিই এখনও তাদের দেখা যায়? দু'একটা ছবি থাকলে শেয়ার করুন না কেন? আমরা সবাই উপকৃত হতাম।

মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

Post a Comment