May 18, 2008

মৃত্যুর পথে শতবর্ষী পামগাছ

রাজধানীর ওয়ারীর নবাব স্ট্রিটের বলধা গার্ডেনের শতবর্ষ পূর্ণ হবে আগামী ডিসেম্বরে প্রকৃতিপ্রেমিক দানবীর নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী অতি যত্নে ১৯০৯ সালে সাইকি ও সিবেলি নামে এ বাগানটি তৈরি করেনশুরুতেই ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ করে আপন মহিমায় বাগানটি সাজিয়েছিলেন তিনিআজ নানা দেশের বিরল প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এটিবর্তমানে ৮৭ পরিবারভুক্ত ৩৩৯ বর্গের ৬৭২ প্রজাতির ১৫ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে

কিন্তু বলধা পরিবারে আজ আনন্দ নেইকরুণ কান্না পরিবারের বৃক্ষ, তরুলতা-সবার চোখেশোকে বিহ্বল তারাকারণ শতবর্ষে ফোটা দেশের একমাত্র সুগার পামটি কিছুদিনের মধ্যেই মারা যাবে১৯৩৯-'৪০ সালের মধ্যে জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের নিজ হাতে বোনা এ গাছটি কিছুদিন হলো ফুল ফুটিয়েছেএখন শুধু ফল হওয়ার অপেক্ষতাও অতি ক্ষণকালের; মাত্র এক মাসবংশধর সৃষ্টির পর এটি পৃথিবীতে আর থাকতে চায় নাতাদের বেড়ে ওঠার পথ মসৃণ করে দিতেই অধরা থেকে বিদায় নেবে গাছটিএটিই প্রকৃতির নিয়ম!

বলধার তত্ত্বাবধায়ক রুহুল আমিন এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, পামগাছটিতে এখন গাছের ডালের মতো মঞ্জুরিতে ক্রিম-সাদা ফুল ফুটেছেফুল ফোটার পরে গাছটি মাত্র কয়েক মাস বেঁচে থাকবেগাছের কাণ্ডে লম্বালম্বিভাবে পাতাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছেকাণ্ডে ফাটল দেখা দিয়েছেএখন ফাটল আরো বাড়ছেফুল থেকে বীজ হয়ে পেকে পরবর্তী বংশধর তৈরি করেই এটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেতবে বীজগুলো সংরক্ষণ করা হবেএরপর বোটানিক্যাল গার্ডেনে পাঠিয়ে দেয়া হবেইতোমধ্যে নার্সারিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেতিনি জানান, গাছটি নরেন্দ্রনারায়ণের নিজের লাগানোএর চারা বিদেশ থেকে আনা১৯৩৮-৪০ সালের মধ্যে এটি বোনা হলেও গাছটির বয়স হবে ৭০ বছরএর বৃদ্ধি ও উচ্চতা দেখেও তাই মনে হয়আমাদের দেশের নারিকেল ও সুপারিগাছের উচ্চতা দেখেও এভাবে বয়স অনুমান করা যায়

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পামগাছটি অত্যন্ত দৃঢ়তালগাছের মতো চেরাই করে এর খুঁটি বানালে দীর্ঘস্থায়ী হয়এমনকি মাটিতেও সমান শক্তিমান; ঘরের বরগা ও কড়ি হয়সাগুতাল বা মচ্ছপুচ্ছ পাম (ক্যরিওটা ওরেনস), বোতল পাম বা পর্বত মহিমা (রসস্টোনিয়া রিজিয়া), তাল, নারিকেল প্রভৃতি একই পরিবারের (পামে) গাছের মতো দুর্দান্তবলধার দুটি অংশ সিবেলি ও সাইকি১৯৩৬ সালে ২৭ বছরের যত্নে সাইকির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়১৯৩৮ সালে সিবেলি নির্মাণ শুরু হয়ওয়ারীর নবাব স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে দক্ষিণের অংশের নাম সাইকিসিবিলি তারই মুখোমুখি নবাব স্ট্রিটের উত্তর দিকে অবস্থিতসিবিলির উত্তর দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ প্রাচীন রেললাইন; বর্তমানে সেটি রাস্তা হয়ে গেছেতার উত্তরে ২০০ গজের মধ্যে বঙ্গভবনের দক্ষিণের সীমানা দেয়ালসিবেলির উত্তর সীমানা দেয়ালের পাশে বাগানের আদি গাছ পাম (করিফা এলাটা) গাছে ফুল ফুটেছেপ্রকৃতিপ্রেমিক নরেন্দ্রনারায়ণ সিবেলির জমি ক্রয় করেন শঙ্খনিধি পরিবারের ব্যবসায়ী লালমোহন সাহার কাছ থেকেএটি সাহা পরিবারের বাগানবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতোএ সময়ও শঙ্খনিধি পুকুরটি ছিল বর্তমানের মতো ধাপে ধাপে বাঁধানো পাড়এতে পুকুরের পাড়ের মাটির সঙ্গে পুকুরের জলজ প্রাণীর পরিবেশ ভারসাম্য বজায় থাকেএ বাগানবাড়ির বিখ্যাত সূর্যঘড়িটি (সান ডায়াল) সাহা পরিবারের তৈরিবলধার তত্ত্বাবধায়ক রুহূল আমিন জানান, জমিদার পুকুরের সঙ্গে সূর্যঘড়িটি কিনে নেনএছাড়াও জমিদারের কেনার সময় এখানে দুটি বিখ্যাত গাছ ছিল-একটি দেশি বাদাম (টারমিনালিয়া কাটাপ্পা), অন্যটি দেশি খেজুর (ফিনিক্স সিলভেসট্রিস)বর্তমানে এগুলো নেইতবে তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে এটিই একমাত্র সুগার পাম

বলধা ও রমনা পার্কে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছেসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগানের জন্য এটি ক্ষতিকরএখান থেকে পানি তুলে পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছেপ্রকৃতিপ্রেমিরা ছোট অগভীর নলকূপ বসিয়ে শুধু বাগানে পানি সরবরাহ করার দাবি করেছেনবলধার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে উঁচু ইমারতও বাগানের পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেসিবেলিতে দর্শক ঢোকার ব্যাপারে আরো কড়াকড়ি করা দরকার বলেও মত দিয়েছেন তারা

জানা গেছে, বলধার মতো ব্যক্তি উদ্যোগে আরেকটি ঐতিহাসিক বাগান ছিল জামালপুরের ঈশ্বরচন্দ্র গুহের চৈতন্য নার্সারী, যা বলধার আগে ১৮৯৪ সালে শুরু হয়কিন্তু কাজ আরম্ভ হয় তারও ১০ বছর আগেআর এটিও সারা পৃথিবী থেকে চারা সংগ্রহের মাধ্যমে গড়ে ওঠেবলধার নরেন্দ্রনারায়ণ এবং জামালপুরের ঈশ্বরচন্দ্র গুহ শখ করে বাগান করেনএখান থেকে পামগাছ এনে ভিক্টোরিয়া পার্ক বা বাহাদুর শাহ পার্কে ১৯০৫ সালে বোনা হয়

সূত্র: আমার দেশ, ২৪ এপ্রিল, ২০০৮


1 comments:

Anonymous said...

এরকম বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ। গাছখেকোদের হাত এড়িয়ে এই দুর্লভ গাছটি বেচে যাওয়ায় ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
প্রিয় ব্লগার, সচেতন থাকার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

Post a Comment