February 29, 2008

লাউয়াছড়া ন্যাশনাল ফরেস্ট

লজ্জাবতী বানর

চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত সবুজ শ্যামল মনোমুগ্ধকর পরিবেশের এক আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল। বিশ্বের অগণিত গবেষক ও পর্যটকের আকর্ষণ এই শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে চা বাগান, রয়েছে নানা প্রজাতির বিরল পশুপাখি। রয়েছে জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর মহামিলনের নান্দনিক সৌন্দর্যের কেন্দ্র লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক। ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট খ্যাত এ পার্কটি বিনোদনের আকর্ষণীয় সপটে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের নয়ন ভুলানো এ পর্যটন কেন্দ্রটি শীতের শুরু থেকেই অগণিত পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন শ্রীমঙ্গলের ন্যাশনাল পার্ক শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য তা নয়, বরং দেশে যেটুকু বন এখনো অবশিষ্ট রয়েছে তার মধ্যে আকর্ষণীয়। ১৯২৫ সালে ১২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে প্ল্যান্টেশন করে তৈরি বনরাজি এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারণ করেছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই পার্কে রয়েছে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশুপাখি। বিভিন্ন দেশের পাখিপ্রেমীরা লাউয়াছড়া পার্ক দেখতে ছুটে আসেন। এখন এই পার্কটি ধীরে ধীরে দেশের শিক্ষা, গবেষণা, ইকো-ট্যুরিজম এবং ভ্রমণবিলাসীদের চিত্তবিনোদনের অন্যতম আকর্ষণীয় সপট হয়ে উঠেছে।

বিরল এক নির্জন পরিবেশে অবস্থিত লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির গাছপালা। এর মধ্যে আছে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, ম্যানজিয়াম, ডুমুর প্রভৃতি। এ ছাড়াও রয়েছে ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতীর সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে উল্লুক, বানর, লজ্জাবতি বানর, হনুমান, ধনেষ, শ্যামা, অজগর, মেছোবাঘ, হরিণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ বনের বিচিত্র পশুপাখি ও পোকামাকড়ের কলকাকলি, বানরের ভেঙচি আর উল্লুকের এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছোটাছুটি পর্যটকদের মনে আনন্দের শিহরণ জাগিয়ে তোলে।

ঝিঁঝিঁ পোকাড় শব্দকে পর্যটকরা বলে থাকেন ফরেস্ট মিউজিক। এই ফরেস্ট মিউজিক শুনতে শুনতে পর্যটকরা হারিয়ে যান বনের গহিন অরণ্যে। এ জন্য বনে রয়েছে ৩টি প্রাকৃতিক ফুট ট্রেইল বা পায়ে হাঁটা পথ। এর মধ্যে একটি ৩ ঘণ্টার, একটি ১ ঘণ্টার ও একটি ৩০ মিনিটের পথ রয়েছে। পর্যটকরা ইকো-ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন। এ পার্কে পর্যটকদের জন্য একটি ইনফরমেশন সেন্টার রয়েছে। এখান থেকে পাওয়া যাবে যাবতীয় তথ্য। এ ছাড়াও পার্কে রয়েছে ইকো-কটেজ, ইন্সপেকশন বাংলো, গোলঘর, ফেন্সি ব্রিজ, টয়লেট প্রভৃতি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য পার্কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বিলবোর্ড ও নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ন্যাশনাল পার্কে প্রাইভেটকার ও জিপ নিয়ে পরিদর্শন করা যায়। যারা গবেষণার কাজ করবেন বা বেড়ানোর জন্য থাকবেন, তাদের জন্য শ্রীমঙ্গলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এ পার্কটি এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানে এসে শিক্ষার্থীরা গাছপালা থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সব বিষয়েই গবেষণার সুযোগ পাবেন।

0 comments:

Post a Comment