February 6, 2008

বিলুপ্তির মুখে ২০১ প্রজাতি

বন বিভাগের দেয়া পজেশন সার্টিফিকেট ছাড়া বন্যপ্রাণী পালন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ গত ৩৬ বছরে দেশে একবারও অবৈধ মালিকদের কাছ থেকে বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান হয়নি। বন বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রেসকিউ সেন্টার না থাকায় এতোদিন অভিযান পরিচালনা করা যায়নি।

গত ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর বন বিভাগ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত ১৯৪টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা প্রাণীগুলোর মধ্যে ১৮৬টিকে ছাড়া হয়েছে কক্সবাজারের দুলাহাজরা সাফারি পার্কে। বাকি আটটিকে ছাড়া হয় সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্র ও শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কে। এসব প্রাণীর মধ্যে চিত্রা হরিণের সংখ্যা সর্বাধিক ৭৮টি। এছাড়া রয়েছে মায়া হরিণ, সাম্বার হরিণ, হাতি, ভালুক, অজগর সাপ ও কুমিরসহ প্রায় ২২ প্রজাতির প্রাণী। মূলত সৌখিন পলিটিশিয়ান ও ধনী ব্যবসায়ীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব প্রাণী আটক করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানা গেছে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা বন্যপ্রাণী ছেড়ে দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে -যাযাদি
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন (সংরক্ষণ) (সংশোধন)-১৯৭৪ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বন্যপ্রাণী পালন করতে ইচ্ছুক হলে তাকে বা তাদের বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে পজেশন সার্টিফিকেট নিতে হয়। চিড়িয়াখানা থেকে প্রাণী কিনতে হলে অথবা কারো কাছ থেকে উপহার পাওয়া প্রাণী লালন-পালন করতেও এ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। দেশে বন্যপ্রাণী পালনের জন্য এ পর্যনৱ কয়টি পজেশন সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে তা জানতে ডেপুটি কনজারভেটর অফ ফরেস্ট মিজ শিরিনা বেগমের কাছে ফোন করা হলে তিনি তার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই বলে জানান। বন্যপ্রাণী শিকার বা হত্যা করা এবং পজেশন সার্টিফিকেট ছাড়া বন্যপ্রাণী পালন করার অপরাধে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাস থেকে এক বছর জেল হতে পারে। পজেশন সার্টিফিকেট ছাড়া বন্যপ্রাণীর চামড়া, শিং ও দাত বাড়িতে রাখা বা মাংস খাওয়াও সমান দন্ডনীয় অপরাধ। তবে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী এবং কুকুর, বেড়ালের মতো পোষা প্রাণী পালনের ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য নয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. তপন কুমার দে গত ৩৬ বছরে কেন বন্যপ্রাণী উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি- তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, বেশির ভাগ মানুষ জানে না অনুমতি ছাড়া বন্যপ্রাণী পালন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের সচেতন করার কার্যকর উদ্যোগও এ পর্যন্ত খুব একটা নেয়া হয়নি। অসচেতন মানুষকে শাস্তি দেয়ার বিষয়টিকে অমানবিক বিবেচনা করেই সম্ভবত বিগত সরকারগুলো উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়নি। দ্বিতীয়ত মানুষের অবৈধ মালিকানা থেকে উদ্ধার করার পর মামলার আলামত হিসেবে বন্যপ্রাণীকে নিকটবর্তী কোনো রেসকিউ সেন্টারে রাখতে হয়। কিন্তু দেশে কোনো রেসকিউ সেন্টার না থাকায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা এতোদিন মানুষের বাসাবাড়িতে বন্যপ্রাণী দেখেও না দেখার ভান করেছেন, উদ্ধার অভিযানে যাননি।

নিজের একটি গবেষণা কর্মের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. তপন জানান, দেশে বন্যপ্রাণীর মোট প্রজাতি সংখ্যা ৮৯৫টি। নির্বিচারে হত্যা, শিকার ও বনজঙ্গল উজাড়ের ফলে ইতিমধ্যেই ১৩ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়া মহাবিপন্ন, বিপন্ন ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আছে আরো ২০১ প্রজাতির প্রাণী। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য দেশে ১৮টি অভয়ারণ্য রয়েছে বলে তিনি জানান। ড. তপন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য প্রচলিত আইন আরো কঠোর করা, পর্যাপ্ত সংখ্যক রেসকিউ সেন্টার তৈরি করা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী বৃহত্তর ইকলজি ও খাদ্যচক্রের অংশ। একে ধ্বংস করার অর্থ মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করা।

সুত্র: দৈনিক যায়যায়দিন, ১৭ এপ্রিল ২০০৭

0 comments:

Post a Comment