February 21, 2008

বার্ড ফ্লু (Bird Flu)

সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহ রোগ বার্ড ফ্লু সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেয়ে গেছি। সেগুলো সংগ্রহ করে এখানে পোস্ট করে দিলাম। এই রোগটা এতটাই ভয়ংকর যে আমাদের সচেতন ও সতর্ক না হয়ে কোন উপায় নেই।

বার্ড ফ্লু কি?

  • বার্ড ফ্লু ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত রোগ৷
  • এই ভাইরাস সাধারণতঃ পাখির শরীরে বাস করে৷
  • বার্ড ফ্লু অতিথি পাখি থেকে গৃহপালিত পাখিতে এবং পরে আক্রান্ত পাখি থেকে অন্য পাখি এবং মানুষ ও অন্য প্রাণীতে ছড়ায়৷
  • এই ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করে রোগ এবং মৃতু্য ঘটাতে পারে৷
  • এই ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশের পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিবর্তীত হয়ে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রামিত হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে৷
  • এরকম পরিস্থিতি মহামারীর জন্ম দেয়৷

বার্ড ফ্লু মহামারীঃ
  • বার্ড ফ্লু এখন একের পর এক বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে৷
  • অতিথি পাখির এবং আমদানি/রপ্তানীকৃত পাখি বা হাঁস মুরগীর মাধ্যমে রোগটি বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে৷

বাংলাদেশে বার্ড ফ্লুঃ
  • বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ নারী সরাসরি হাঁস মুরগী পালনের সাথে জড়িত।
  • বার্ড ফ্লুর বিস্তার শুধু মানব স্বাস্থ্যের জন্যই হুমকি নয় বরং তা উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে মারাত্নক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
  • সরকার ইতোমধ্যেই বার্ড ফ্লু সংক্রামিত দেশ থেকে হাঁস-মুরগী আমদানী নিষিদ্ধ করেছে।
  • বাংলাদেশের জন্য বার্ড ফ্লু হুমকির আরেক মাধ্যম অতিথি পাখি৷ প্রতি বছর শীত কালে এদেশে নানা ধরনের পাখি আসে যারা বার্ড ফ্লু ভাইরাস বয়ে আনতে পারে।

বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে করণীয়ঃ
  • - অতিথি পাখি শিকার, বিক্রি করা ও খাওয়া বন্ধ করুন৷
  • - রোগাক্রান্ত অথবা মৃত-পাখি, হাঁস-মুরগী স্পর্শ করবেন না৷
  • - আক্রান্ত অথবা মৃত পাখি পুড়িয়ে অথবা পুঁতে ফেলুন৷
  • - আক্রান্ত অথবা মৃত পাখী দেখলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেমন পশুসম্পদ অফিস বা কৃষি অফিসারকে জানিয়ে দিন৷
  • - গৃহপালিত হাঁস-মুরগীকে বন্য পাখির সংস্পর্শে আসতে দিবেন না৷
  • - নতুন হাঁস-মুরগীকে বাড়ির হাঁস-মুরগী থেকে অন্তত দুই সপ্তাহ আলাদা করে রাখুন৷
  • যে সকল জলাশয়ে অতিথি পাখির আগমন ঘটে সেসব জলাশয়ে বা আশেপাশে গৃহপালিত হাঁস ও মুরগী চলাচল এবং চরানো বন্ধ করুন৷
  • পাখির সংস্পর্শে এলে অথবা পাখির বিচরণভূমি থেকে ফিরে সবসময় সাবান এবং পানি দিয়ে ভাল করে কচলে দুই হাত ধুয়ে ফেলুন৷
  • রান্নার জন্য অথবা যেকোন কারণে পাখির কাঁচা মাংস স্পর্শ করলে সাবান এবং পানি দিয়ে ভাল করে কচলে হাত ধুয়ে ফেলুন৷
  • যে বাজারে হাঁস-মুরগী বিক্রি হয়, সেখানে বার্ড ফ্লু দেখা দিয়েছে বলে শোনা গেলে সে বাজারে যাওয়া এড়িয়ে চলুন৷
  • মুরগীর মাংস এবং ডিম ভালভাবে রান্না করুন৷ মাংসে কোন গোলাপী আভা বা ডিমের কুসুম যেন গলা না থাকে৷
  • বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব সন্দেহ করা হলে যেসব জায়গায় মুরগীর দ্বারা দূষিত হয়েছে তা পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত না করা পর্যন্ত এসব জায়গা স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন৷ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার তাড়াতাড়ি চুন দিয়ে জীবণুমুক্ত করুন৷
  • স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পরামর্শ সাপেক্ষে হাঁস-মুরগীকে টিকা দিয়ে নিন৷
  • কোথাও অধিক হারে গৃহপালিত হাঁস মুরগী ও অতিথি পাখি অসুস্থ হলে বা মারা গেলে নিকটস্থ পশুসম্পদ অফিসে খবর দিন৷
  • কোন ব্যক্তির যদি অতিথি পাখি বা হাঁস-মুরগীর সংস্পর্শে আসার পরে সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিতে বলুন৷
  • বার্ড ফ্লু সম্পর্কে সর্তক থাকুন, অন্যদের জানান, দ্রুত মোকাবিলা করুন৷
------------------------------------------
বার্ড ফ্লু ভাইরাস কী?
বার্ড ফ্লু বা এভিয়েন বা পাখি সম্পর্কিত রোগ একই। আর্থোমিক্সিরিডি গোত্রের ভাইরাস আক্রান্ত পাখিদের রোগ। মুরগি বা যেকোনো পাখি এই ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯৫৫ সালে ইতালিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তকে ফাইল প্লেগ নামে পরিচিত করা হয়। বর্তমান নাম বার্ড ফ্লু বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এই ভাইরাসের অনেক সাব-টাইপ বা স্ট্রেন রয়েছে। এসব স্ট্রেনের মধ্যে এইচ-৫, এন-১ সবচেয়ে মারাত্মক। দ্রুত এক পাখি থেকে ঝাঁকের অন্য পাখিদের আক্রমণ করে। পাখির লালা ও মলের মাধ্যমে দ্রুত বিস্তার করে। আক্রান্ত পাখি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।

কীভাবে ছড়ায়?
বার্ড ফ্লু বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পাখির অন্ত্রে বাস করে। বিষ্ঠা বা মলের সঙ্গে বের হয়ে আসে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাস বা আক্রান্ত পাখির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে শ্লেষ্ক্না ও কফ আকারে বের হয়ে এসে সুস্থ পাখিদের আক্রমণ করে। অতিথি পাখিরা সাধারণত এই ভাইরাসের অন্যতম বাহক। আক্রান্ত পাখির বিচরণে, খামার যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও খামারের কর্মীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

চেনার উপায়:
ভাইরাস আক্রমণের তিন থেকে ১০ দিন পর রোগের লক্ষণ পাওয়া যায়। আক্রান্ত পাখির পালক উসকোখুসকো হয়ে যায়। ক্ষুধামন্দা ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মাথার ঝুঁটির গোড়ায় রক্তক্ষরণ হয়। পায়ের পাতা ও হাফ-জয়েন্টের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে রক্ত জমে যায় ও রক্তক্ষরণ হয়। হঠাৎ করে মুরগির ডিম উৎপাদন হার কমে যায়ে। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
  • খামারে হঠাৎ করেই এ রোগ ছড়াতে পারে। একসঙ্গে অনেক মুরগি মারা যাবে। অসুস্থতার লক্ষণ ছাড়াই মারা যেতে পারে। অবসাদ, ঝিমুনি, ক্ষুধামন্দা, উসকোখুসকো পালক, জ্বর। এসব লক্ষণের পর মারা যেতে পারে।
  • দুর্বলতা ও চলাফেরায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। আক্রান্তরা চুপচাপ বসে থাকে। মাথা মাটিতে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
  • অল্প বয়সের মুরগিদের পক্ষাঘাত দেখা দেবে।
  • ডিম পাড়া কমে যাবে; নরম খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে।
  • গলা ও মাথার ঝুঁটি ফুলে যায়। গাঢ় লাল বা নীল রং ধারণ করে এবং কখনো কখনো ক্ষুদ্র বিন্দুর রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
  • আক্রান্তরা শ্বাসকষ্টে ভোগে।
  • শরীরের পালকবিহীন অংশ যেমন পায়ে রানের নিচের অংশে রক্তক্ষরণ হবে।
  • খামারে ১০০ ভাগ পর্যন্ত মোরগ-মুরগি মারা যায়।
  • হাঁস ও রাজহাঁসদেরও একই লক্ষণ দেখা দেবে।
  • অনেক ক্ষেত্রে হাঁস রোগের লক্ষণ ছাড়াই জীবাণু ছড়াতে পারে।

শরীরের ভেতরে পরিবর্তন:
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে শ্বাসনালী, খাদ্যনালী এবং হূৎপিন্ডের ভেতর ও বাইরে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো রক্তক্ষরণ দেখা যায়।
  • চামড়ার নিচে বিশেষ করে ঘাড়ে ও পায়ের গিরায় প্রচুর পানি জমে।
  • মৃতদেহ পানিশুন্য হয়ে যেতে পারে।
  • প্লীহা, বৃਆ, কলিজা এবং ফুসফুস ইত্যাদিতে ধুসর রঙের মৃত কোষ থাকতে পারে।
  • বায়ুথলি অস্বচ্ছ হতে পারে এবং ধুসর বা হলুদাভ তরল পদার্থ পাওয়া যেতে পারে।
  • প্লীহা বড় হতে পারে এবং রক্তক্ষরণের ফলে গাঢ় রং ধারণ করতে পারে।
একই লক্ষণের অন্য রোগ:
এসব রোগ-লক্ষণ বার্ড ফ্লু থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এসব রোগেও খামারের মুরগি দ্রুত মারা যায়।
  • তীব্র রানিক্ষেত রোগ।
  • ডাকপ্লেগ রোগ। মুরগির ডাকপ্লেগ হয় না।
  • মুরগির সংক্রামক করাইজা।
  • তীব্র বিষক্রিয়া।
কেন মারাত্মক:
এটি মারাত্মক রোগ। খামারের মুরগি দ্রুত মারা যেতে পারে। খামার থেকে খামার ও এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগগ্রস্ত মুরগি থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটতে পারে। দুইভাবে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। অতিসংক্রামক হাইপ্যাথজেনিক এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ঐচঅও, আবার মৃদু সংক্রামক বা লোপ্যাথজেনিক খচঅও অবস্থায়ও ছড়াতে পারে।

খামারকর্মীদের সতর্কতা:
এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ ভাইরাসে প্রায় ২০০ মানুষ মারা গেছে। এদের সবাই খামারকর্মী। সে কারণে ভোক্তা নয়, খামারকর্মী ও আক্রান্ত খামারের মুরগি নিধনে নিয়োজিতদের বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। দরকারি বেশভুষা ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পায়ে প্লাস্টি গাম বুট ও অ্যাপ্রোন পরতে হবে। শারীরিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। যারা জীবন্ত মুরগির বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত তাদেরও এসব পেশাক পরে থাকতে হবে। খামারে জীব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। শেডে প্রবেশের সময় ফুটপথে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি রাখতে হবে। এতে পা ধুয়ে খামারে প্রবেশ নিশ্চিত করা দরকার। খামার ও জীবন্ত মুরগির দোকানের চারপাশে নিয়মিত ফরমালিন বা শক্তিশালী জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। কোনোভাবেই অতিথি পাখিদের সংস্পর্শে আসা যাবে না।

প্রতিষেধক ওষুধ:
চীন ও ফ্রান্সসহ অনেক দেশই মুরগির এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য লাইভ ভ্যাকসিন আবিষ্ককার করেছে। চীনের স্টেট মিডিয়া জানায়, অরবিন রিসার্স ইনস্টিটিউট বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে চার বছর গবেষণা করে লভি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছে। এই ভ্যাকসিন বার্ড ফ্লু ভাইরাসসহ রানিক্ষেত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করবে।
খামারের মুরগিদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি ও কবুতরসহ কোনো পাখিরই কোনো চিকিৎসা নেই। উন্নত বিশ্বে এ রোগের টিকা দেওয়ার প্রথা চালু থাকলেও আমাদের দেশে এখনো এ টিকা আমদানি করার অনুমতি নেই। দীর্ঘমেয়াদি রোগপ্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

রান্না মাংস-ডিমে ভয় নেই:
এই ভাইরাসে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশিষ্ট পশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনজুর আজিজ বলেন, "আমরা যে তাপে মুরগির মাংস রান্না করি সেই তাপে কোনো জীবাণু বাঁচে না।
তা ছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। বাজার থেকে তাজা, সবল জীবন্ত মুরগি কিনলে তা পুরোপুরি নিরাপদ। আক্রান্ত মুরগি বাজার পর্যন্ত আনতে আনতে তাজা থাকবে না। তবে বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে অল্প সেদ্ধ মাংস বা ডিম না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া রান্নার আগে মাংস কাটার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।"
খামারকর্মীদের শেডে কাজ করার সময় মাস্ক পরে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে। থুতু ফেলা যাবে না। কাজ শেষে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ও পা ভালো করে ধুয়ে ফেলা দরকার।

জীব-নিরাপত্তা জোরদারের বিকল্প নেই:
বায়ো সিকিউরিটি বা জীব-নিরাপত্তা একটি সাধারণ জ্ঞান। এক কথায় জীব নিরাপত্তা হলো খামারের মুরগি ও খামারকর্মীদের রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখা। জীব-নিরাপত্তা নিতে অতিরিক্ত কোনো খরচ হয় না। এটি মূলত আচরণবিধি। এর ফলে রোগজীবাণু থেকে খামার রক্ষা পাবে এবং হাঁস-মুরগি রোগজীবাণু থেকে মুক্ত থাকবে।
খামারের হাঁস-মুরগি সব সময় ভালো জায়গায় রাখতে হবে। ভালো জায়গা হলো পরিষ্ককার পানি ও খাবারের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা; যেখানে নিয়মিত টিকা ও ওষুধপথ্যের ব্যবস্থাও আছে।হাঁস-মুরগি সব সময় সংরক্ষিত ঘেরা জায়গায় রাখতে হবে।
খামারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দর্শনার্থীদের জুতা-স্যান্ডেল, ছাগল, ভেড়া, বন্য পাখি রিকশাভ্যান ও মোটর গাড়ির মাধ্যমে আক্রান্ত এক এলাকা থেকে অন্য এলাকার খামারে রোগ ছড়াতে পারে। সে জন্য দর্শনার্থীদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখতে হবে।

পাশের খামারে যদি রোগ দেখা দেয়:
পাশের খামারে এই রোগ দেখা দিলে বুঝতে হবে, আপনার খামার এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। মনে রাখতে হবে, আপনার খামারটিও আক্রান্ত হতে পারে। তবে এ সময় অধৈর্য না হয়ে ঠান্ডা মাথায় কতগুলো মৌলিক নীতি অবলম্বন করতে হবে।
খামারের হাঁস-মুরগির জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নতুর হাঁস-মুরগি কিনবেন না। বহিরাগতদের কোনোভাবেই খামার শেডের কাছে আসতে দেওয়া যাবে না। খামারের আশপাশ, শেড, শেডের প্রত্যেকটি যন্ত্রপাতি এমনকি সাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়মিত পরিষ্ককার রাখতে হবে। খামারের বর্জ্য ও বিষ্ঠা সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে।

যদি মড়ক লাগে:
খামারে মুরগির মৃত্যু বা মড়ক অনেক সময়ই হয় ও হতে পারে। যে কারণেই মড়ক লাগুক না কেন, দ্রুত নিকটস্থ পশুসম্পদ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। মনে রাখবেন, চোখে দেখে কোনোভাবেই বোঝা যাবে না মৃত্যুর কারণ বার্ড ফ্লু ভাইরাস কি না। রোগের কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই ল্যাবরেটরি টেস্ট করাতে হবে। পাশুসম্পদ হাসপাতালের চিকিৎসক নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরিতে রক্তের নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর আপনাকে নিশ্চিত করবেন রোগের কারণ কী। যদি বার্ড ফ্লু ভাইরাস পাওয়া যায়, তাহলে নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে খামারের মুরগি নিধন ও ডিম নষ্ট করতে হবে এবং খামারের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

করণীয়:
  • মুরগির মাংস ও ডিম ভালোভাবে রান্না ও সেদ্ধ করে খেতে হবে।
  • খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • ডিম ফ্রিজে রাখার আগে হালকা গরম পানি বা ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে ধুয়ে রাখতে হবে।
  • বাড়ির হাঁস-মুরগি খাঁচায় ভরে রাখুন বা কোনো নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না।
  • খামারে কাজ করার সময় মাস্ক, গ্লাভস বা দস্তানা এবং অ্যাপ্রোন পরে কাজ করতে হবে।
  • খামারের ফুটপথে পা ধুয়ে প্রবেশ করুন।
  • হঠাৎ জাবর কাশি, গলার স্বর ভেঙে গেলে, চোখে কোনো সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অনুচিত:
  • অতিথি পাখিদের শিকার ও খাওয়া যাবে না।
  • মুরগি কাটার ছুরি, বঁটি ও মাংস রাখার পাত্র গরম পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে রাখতে হবে।
  • জীবন্ত মুরগি ছাড়া কোনো রোগগ্রস্ত মুরগি, হাঁস, কবুতর কেনা বা খাওয়া যাবে না।
  • খামার শেড থেকে শিশুদের দুরে রাখতে হবে।
  • খামারের অসুস্থ মুরগি খাওয়া যাবে না।
  • গুজব বিশ্বাস করা যাবে না।

0 comments:

Post a Comment