দিনাজপুর ও নওগাঁর শালবন
ফ রি দ উ দ্দি ন আ হ মে দ
দিনাজপুরের শালবন
বীরগঞ্জের সিংড়া আর পীরগঞ্জের ঠুংনিয়াজুড়ে বিস্তৃত ছিল বিরাট এক বন। শালের সঙ্গে সেখানে ছিল হরীতকী, বহেরা, আমলকী, কড়ই, জারুল, হলদু, ধারমারা, বট, শিমুল ইত্যাদি গাছ। এসব বন চষে বেড়াত মেছোবাঘ, বাগডাশা, খরগোশসহ নানা বন্যপ্রাণী আর পাখি। বড় বড় গাছের নিচে ছিল নানা রকমের উদ্ভিদ যা মানুষের খাদ্য থেকে শুরু করে প্রাথমিক চিকিৎসায় পর্যন্ত ব্যবহূত হতো।
বর্তমানে ৪০০ হেক্টরে এসে ঠেকেছে সেই বন। বনে শাল ছাড়া অন্য গাছও নেই। বছরে একটা-দুটো খরগোশ ছাড়া আর কোনো প্রাণীও দেখা যায় না। বনের চারপাশে কিছু সাঁওতাল ও অন্যান্য আদিবাসীর বাস। খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য চাহিদার জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল তাঁরা।
আশির দশকে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দিনাজপুরের ‘নেই’ হতে বসা এ বনই আবার নতুন করে তৈরির উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। প্রথম দিকে বনভুমি দখলকারীদের মধ্যে কিছুটা অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তা ছিল। গাছ কাটার পর অংশীদারেরা যখন মোটা অঙ্কের হিস্যা পেল তখন সেই শঙ্কাও কেটে গেল। সরকারের দিক থেকেও এ বনায়ন ছিল লাভজনক। আগে বনায়ন করে গাছ রক্ষা করতে পারত না সরকার। কিন্তু এখন জনগণকে দিয়ে গাছ লাগিয়ে তাদের দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ করে সরকারও লাভবান হলো, জনগণেরও কিছু আয় হলো। ক্রমে গাছপালাবিহীন এ অঞ্চল আবার গাছপালায় ভরে উঠল। বিদেশি গাছ লাগানোর জন্য বন বিভাগ সমালোচিতও হলো অবশ্য। তবে এ কথাও ঠিক, সামাজিক বনায়ন না থাকলে বর্তমানে শালবন যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও রাখা সম্ভব হতো না।
মানুষকে বন থেকে কাঠ সংগ্রহে নিরুৎসাহিত করতে বন বিভাগ সিংড়াসহ প্রায় সব শালবনে শালগাছের নিচে কাঁটাওয়ালা বেতের চারা লাগিয়েছে। এখন কোনো কোনো শালবনে এসব বেত এত বেশি ছড়িয়ে গেছে যে, শালের চারাই জন্নাতে পারছে না। ভবিষ্যতে শালবনে বেত লাগানোর আগে যেসব বনে বেত লাগানো হয়েছে সে বনে গাছের চারা গজানোর ক্ষমতা বিঘ্নিত হচ্ছে কি না তা যাচাই করা জরুরি।
নওগাঁর শালবন
নওগাঁ জেলার ধামইরহাটেও ছড়িয়েছিটিয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে একটি শালবন। এ বনের অবস্থাও সিংড়ার বনের মতো। শাল ছাড়া অন্য গাছের দেখা মেলা ভার। বন্যপ্রাণীও নেই বললেই চলে। গাছগুলোর বয়স ১০-১৫ বছরের বেশি হবে না। বোঝা যায়, এখানে শালবন ধ্বংস করার হার কমে এসেছে।
এসব বনের ভেতরে প্রচুর রাস্তাঘাট। এগুলো দিয়ে রিকশা থেকে শুরু করে ট্রাক পর্যন্ত হরেক রকম যান প্রতিনিয়ত চলছে। এসব বন্ধ করা না হলে আবার গাছ চুরি শুরু হতে পারে। বন্যপ্রাণীদের জন্যও গাড়ি বা মানুষ চলাচল কাম্য নয়। শালবন এলাকায় সড়ক নেটওয়ার্ক এমনভাবে করতে হবে যেন বনের মধ্য দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে না পারে। সড়ক বনের পাশ ঘেঁষে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
শালবনের ওপর নির্ভরশীল জনগণ শুকনো পাতা, জ্বালানি কাঠ ও অন্যান্য বনজ দ্রব্য সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের অন্য কোনো আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত করে বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো দরকার। যেসব স্থানে শালগাছ কমে গেছে সেখানে উন্নত শালের চারা লাগাতে হবে। শালবনে আগে যেসব গাছ পাওয়া যেত, সেগুলোর চারা আবার লাগাতে হবে, যাতে বনের হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ ফিরে আসে। একই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া বন্যপ্রাণীদের পুনর্বাসনেরও উদ্যোগ নিতে হবে।
শালবন স্থানীয় জনগণের চিত্তবিনোদনের উত্তম স্থান। তাই এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বনের ভেতর গাড়ি যেতে না পারে, মাইক না বাজে। ট্রেইল থাকবে, সেটা দিয়ে পর্যটকেরা হেঁটে যেতে পারবে; বন্যপ্রাণী, নানা ধরনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য দেখতে পারবে।
0 comments:
Post a Comment