March 1, 2008

বাঁশখালী ইকোপার্ক - আবুল কাসেম ভুঁইয়া

২০০৪ সালের পর এর উন্নয়নের ব্যাপারে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া বাঁশখালী ইকোপার্ক সম্পর্কে জানা যায়, বর্তমানে যেখানে ইকোপার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এক সময় ছিল জঙ্গলাকীর্ণ ও শ্বাপদ-সংকুল। জানা-অজানা গাছগাছালি, পশু পাখির দেখা মিলত এখানে। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও আশেপাশের লোকজনের কারণে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যায়। বাঁশখালী ইকোপার্ক প্রকল্প এলাকাটি চুনতি অভয়ারণ্যের অন্তর্ভূক্ত হলে দীর্ঘ অব্যবস্থাপনার কারণে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

১৯৯৩ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, 'ইফাদ' এর আর্থিক সহায়তায় বামের ছড়ার উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে স্লুইচ গেটের মাধ্যমে জলদি, শীলকূপ ও চাম্বল এলাকায় কৃষিজমিতে পানি সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৯৯ সালের দিকে বিশ্বখাদ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় এলজিইডি বাঁশখালী উপজেলা কর্তৃপক্ষ ডানের ছড়ায় আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করে। এখানে বাঁধ দেয়ার কারণে সুন্দর কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। বামের ছড়ার বাঁধের জলাশয় এলাকার পরিমাণ ২০ হেক্টর এবং ডানের ছড়া বাঁধের জলাশয় এলাকার পরিমাণ ৬০ হেক্টর।

২০০০ সালের দিকে বামের ছড়া এবং ডানের ছড়ার মধ্যবর্তী পাহাড় কেটে হ্রদ দু'টিকে এক করা হয়। এর পর থেকে বাঁশখালী ইকোপার্কের শ্রীবৃদ্ধিসাধন করা হয়। ২০০৬ সালের দিকে ইকোপার্কটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক এখন দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট। যাদের এখনো এই পর্যটন স্পট সম্পর্কে ধারণা নেই, তাদের একবারের জন্য হলেও পার্কটি দেখে আসা উচিত।

দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের জন্য রেস্ট হাউজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পিকনিক করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বামের ছড়া এবং ডানের ছড়া লেকে নৌ বিহারের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত বোট। এখানে রয়েছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যেখান থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেলে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী জাহাজের বহর এবং বঙ্গোপসাগর দেখা যায়। এখানে লেকের উপর রয়েছে দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু। সেতু দিয়ে পাহাড়ের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়া যায়। লেকে অতিথি পাখির কলকাকীতে মুখরিত থাকে পরিবেশ। বন্যপশুপাখীর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আগত পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে কটেজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্ণার, প্যানারোমিক ভিউ টাওয়ার, উন্নতমানের টয়লেট, সাসপেনশন ব্রিজ, ফুল, ফলের বাগানসহ আরো অনেক কিছু। বাঁশখালী ইকোপার্ক সম্পর্কে দেশের মানুষ এখনো পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে অবগত হতে পারেননি। তবুও এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এবং দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছেন পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

বাঁশখালী ইকোপার্কটি এখনো পর্যন্ত পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। রেস্ট হাউসে রুমের সংখ্যা কম হওয়ায় স্থানাভাবে পর্যটকদের কষ্ট পেতে হয়। উন্নতমানের হোটেল রেস্তোরাঁর ব্যবস্থা নেই। চট্টগ্রাম শহর থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থাটাই আরামদায়ক নয়। বাঁশখালী সড়কের প্রশস্থতা কম। এই পর্যটন স্পট থেকে সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের লৰ্যে এই ইকো পার্ক নিয়ে প্রচারণা খুব কম।

----------
ইত্তেফাক, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭

0 comments:

Post a Comment